Pages

Tuesday, April 19, 2011

সুকান্ত ভট্টাচার্যের বন্ধু

বেশ কয়েক বছর আগের কথা | তখন বালিগঞ্জ এর এর M M মেডিকেল সেন্টার এ বসতাম| কৃশকায়, কৃষ্ণবর্ন এক ভদ্রলোক দেখাতে এলেন | প্রত্যুষদা র রেফারেনসএ | প্রত্যুষদা নামী অর্থপেডিক সার্জেন | ভদ্রলোক ওনার মামা| বম্বে তে থাকেন | পেশায় রং বাজ | মানে colour/paint এই সব নিয়ে কারবার | প্রথম দর্শনে(বা শ্রবনে) যেটা মনে থাকলো সেটা ওনার কন্ঠস্বর | দেবদুলাল আর বচ্চন মেশানো অমন জলদগম্ভীর ব্যারিটন আগে কখানা শোনার সৌভাগ্য হয় নি| আবার পারে একদিন এলেন | নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে | একটু রাগ করব ভাবছিলাম| ওনার কথা শুনে সেটা আর করা হলো না| ওনারই বয়েস আশির ওপরে | কিন্তু বাড়ি ভর্তি অসুস্থ এবং বয়স্ক মানুষের ভিড় | উনি ই নাকি একমাত্র সুস্থ মানুষ | তাই সকলকে ডাক্তার দেখানো, ওষুধ এনে দেওয়া সব ওনার দায়িত্ব ! কাষ্ঠাহরণের জন্য নবকুমারের অভাব কোনকালেই ছিল না | কেবল এই নবকুমার বয়োবৃদ্ধ এই যা! ভারী কাঁচের আড়ালে ভদ্রলোক এর চোখদুটো খুব মায়াময়, লক্ষ্য করলাম | পরিচয় টা পেলাম তৃতীয় বার |
-আমরা সেই প্রথম থেকেই CPI , বুঝলেন তো | পার্টি যখন নিষিদ্ধ ছিল |
-১৯৪৯?
-তা হবে |
-সুকান্ত তার আগেই চলে গিয়েছে |
-সুকান্ত মানে?
-ভট্টাচার্য | কবিতা লিখত না? আমার বন্ধু তো |
-বন্ধু?
-কাঁধ দিয়েছি| তখন একুশ হয় নি | চলে গেল|
-আপনি সুকান্ত র বন্ধু?
-এই রে গোপন কথাটা বেড়িয়ে গেল যে... ভদ্রলোকের মুখে হাসি |

তার পর কয়েক বছর এসেছেন |
সারাক্ষণ ব্যস্ত |
হাজার কাজ |
আসলে সেই ব্যাপার|
পরিবারে উনি ই একমাত্র কর্মক্ষম মানুষ কিনা!

এলেই গল্প হত অনেক | বিশ্বযুদ্ধ, পাঁচের দশকের বম্বে, পার্টিভাগ এই সব |
সমকালীন রাজনীতি নিয়ে বীতশ্রদ্ধ |
বিশেষ করে দুর্নীতি নিয়ে |

এক দিন আর এলেন না|
ভুলেই গিয়েছিলাম |

আজ বালিগঞ্জ দিয়ে ফেরার সময় হঠাত মনে হলো |

প্রত্যুষদাকে ফোন করলাম |
-কে মামা? উনি তো মারা গিয়েছেন |
-কবে?
-ফেব্রুয়ারী |
কি বলব ভেবে পেলাম না |
-He was a very nice decent person | আমি মামী কে বলব তুমি ফোন করেছিলে |
-আচ্ছা | প্রত্যুষদা, ওনার নাম টা যেন কি ছিল?
স্মৃতিতর্পনের জন্য নাম টা জানা জরুরি |
- মামা? এল জি গাঙ্গুলী |

লালগোপাল গাঙ্গুলী |

সুকান্তর বন্ধু |

আঠেরো বছর বয়েসের বন্ধু |